বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১৬ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

আতিথেয়তা নবী-রাসুলদের আদর্শ

ইসলামী জীবন

মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী:
আতিথেয়তা ও মেহমানদারি মানুষের পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় করে। মানবিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে। মেহমানদারি সামাজিক সম্পর্ক রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার। এতে বড় আনন্দ ও পুণ্য রয়েছে। এটি কল্যাণ ও মহত্ত্বের পরিচায়ক। পাশাপাশি এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সব নবী-রাসুলদের আদর্শ। এই গুণের কারণে মহানবী (সা.) তৎকালীন কাফের-মুশরিকদের কাছেও সমাদৃত ছিলেন।

মেহমানদারিকে ইসলামে উত্তম গুণ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নবীজি (সা.) মেহমানের সম্মান করতে তাগিদ দিয়েছেন। মেহমানের যথাযথ আপ্যায়ন ও কদর করা একজন মুসলমানের ইমানি কর্তব্য। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন মেহমানের সমাদর করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৩৬)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে মেহমানদারি করে না, তার মাঝে কোনো কল্যাণ নেই।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৭৪১৯) আরেক হাদিসে নবী করিম (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-কে লক্ষ্য করে বলেন, ‘…নিশ্চয়ই তোমার ওপর তোমার মেহমানের হক রয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৩৪)

আলী (রা.) বলেন, ‘ভাইদের ভালো খাবারে দাওয়াত দেওয়া আমার কাছে একটি ক্রীতদাস মুক্ত করার চেয়ে বেশি পছন্দনীয়।’ সাহাবায়ে কেরাম বলতেন, খাবারের দাওয়াত দেওয়া উত্তম চরিত্রের অংশ। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িনসহ বড় বড় মনীষীদের অনেক মেহমানদারির ঘটনা অতি মানবীয়।

আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.) সর্বপ্রথম পৃথিবীতে মেহমানদারির প্রথা চালু করেন। আতিয়্যা আওফি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহতায়ালা ইবরাহিম (আ.)-কে এ কারণে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন যে, তিনি মানুষকে খাবার খাওয়াতেন, বেশি বেশি সালাম দিতেন আর মানুষ রাতে ঘুমিয়ে পড়লে তিনি নামাজ আদায় করতেন।’ (তাম্বিহুল গাফিলিন)

নবীজি (সা.)-এর কাছে মেহমান এলে তিনি খুব খুশি হতেন। তাদের আপ্যায়ন করতেন। তিনি ছিলেন অতিথিপরায়ণতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অনেক সময় মেহমানদারি করতে গিয়ে তাকে এবং তার পরিবারকে অনাহারেও থাকতে হতো। একবার বনু গিফার গোত্রের এক লোক রাসুল (সা.)-এর মেহমান হলেন। মহানবী (সা.) আগের দিন অভুক্ত ছিলেন। যেদিন মেহমান এলেন, সেদিন ঘরে ছাগলের দুধ ছাড়া আর কিছু ছিল না। নিজে অনাহারী হয়েও আমাদের রাসুল (সা.) সেই মেহমানকে ছাগলের দুধের সবটুকু খাওয়ালেন। কিন্তু অতিথিকেও বুঝতেও দিলেন না যে, তিনি ক্ষুধার্ত।

মেহমান এলে খুশি হওয়া উচিত। অন্তরে সঙ্কীর্ণতা রাখা অশোভনীয়। মেহমান আল্লাহর রহমত ও বরকত নিয়ে আসে। আল্লাহ যাকে মেহমান হিসেবে পাঠান, তার রিজিকও পাঠিয়ে দেন। তাদের ভাগ্যে আল্লাহতায়ালা সৃষ্টির আগেই এই রিজিক লিখে রেখেছেন। আনাস (রা.) বলেন, ‘যে ঘরে মেহমানের আগমন ঘটে না; সে ঘরে ফেরেশতা আসে না।’

মেহমানদারি এমন গুণ যা মানুষের দোষ-ত্রুটির ওপর পর্দা ফেলে দেয়। মেজবান মেহমানের অন্তরে জায়গা করে নেয়। সবসময় সেই মেজবানের প্রশংসা করে। যখনই তার আলোচনা করা হয়, তখন তার প্রশংসা ছাড়া কথা শেষ হয় না।

মেহমানদারির ফজিলত : পবিত্র কোরআনে মেহমানদারি সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা নিজের ওপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। যদিও বা নিজেরা ক্ষুধার্ত থাকে। আর যারা স্বভাবজাত লোভ-লালসা এবং কামনা থেকে মুক্তি লাভ করে, তারাই সফলকাম।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ৯)

নবীজি (সা.) বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত খাবারের দস্তরখান মেহমানের সামনে বিছানো থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতারা মেজবানের জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকেন।’(আল মুজামুল আওসাত)

মেহমানদারি বলতে শুধু পেটভরে খাওয়ানো নয়; বরং পরস্পর মানবিকতা, হৃদ্যতা ও ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ উদ্দেশ্য। মেহমানদারির শিষ্টাচারের প্রতি যত্মমান হলে মেজবানের ওপর ভারী কিংবা কষ্টকর মনে হবে না। সুরা আহজাবেও এ ধরনের কিছু শিষ্টাচার শেখানো হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! নবীর ঘরে (অনুমতি ছাড়া) প্রবেশ কোরো না। অবশ্য তোমাদের খাবারের জন্য আসার অনুমতি দেওয়া হলে ভিন্ন কথা। তখন এভাবে আসবে যে, তোমরা তা প্রস্তুত হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকবে না। কিন্তু যখন তোমাদের দাওয়াত করা হয়, তখন যাবে। তারপর যখন তোমাদের খাওয়া হয়ে যাবে তখন আপন-আপন পথ ধরবে; কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়বে না।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৩)

আপ্যায়নের সময়সীমা

এ ব্যাপারে নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ ও পরকালের প্রতি যে ইমান রাখে সে যেন মেহমানের সমাদর করে এবং তার হক আদায় করে। নবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, মেহমানের হক কী? তিনি বললেন, এক দিন এক রাত, আর সর্বোচ্চ মেহমানদারি তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত, এর অতিরিক্ত হলো সদকা।’ (বুখারি)

মুসলিম শরিফের একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ হবে না যে, সে তার ভাইয়ের কাছে এত বেশি অবস্থান করা যা তাকে গুনাহগার বানিয়ে ফেলে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাকে গুনাহগার কীভাবে বানিয়ে ফেলে। নবীজি (সা.) বলেন, ‘তার কাছে অবস্থান করতে থাকল, আর তার কাছে কিছুই থাকল না যা দ্বারা তাদের মেহমানদারি করবে।’

এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, মেহমানের হক তিনটি ১. একদিন একরাত মেহমানদারি করা ওয়াজিব। ২. দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন মুস্তাহাব। ৩. তৃতীয় দিনের পর মেহমানদারি করা সদকা বা অনুগ্রহ।

আল-মুগনিল লাবিব গ্রন্থে আছে, এ হকগুলো মুসাফির এবং দূর-দূরান্ত থেকে আগত মেহমানের জন্য প্রযোজ্য। নিজের এলাকার মেহমানের মেহমানদারি করা মেজবানের ইচ্ছাধীন। চাইলে তার জন্য মেহমানদারির ব্যবস্থা করা যেতে পারে, আবার চাইলে মেহমানদারি না করারও সুযোগ আছে।

খাবারের সময়কে লক্ষ করে কোনো বন্ধু কিংবা কারও বাসাবাড়িতে যাওয়া অশিষ্টাচারপূর্ণ। কারও ঘরে খাবারের সময় পর্যন্ত বসে থাকাও অভদ্রতা। এতে করে ঘরের মালিককে পেরেশান হতে হয়। মেহমানের উপস্থিতিতে তাদের খাওয়া-দাওয়ার পরিবেশ থাকে না। আবার সবার পক্ষে যতজন লোকই বাসায় আসুক তাদের আপ্যায়ন করার সামর্থ্যও থাকে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এ ধরনের অনর্থক অভ্যাস থেকে নিষেধ করেছেন।সূত্র:দেশরূপান্তর।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION